
ঢাকা, বাংলাদেশ – ১৩ মে, ২০২৫বাংলাদেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে, দেশটির নির্বাচন কমিশন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করেছে। এর ফলে দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারাল, যা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।দলীয় কার্যক্রমে সরকারি নিষেধাজ্ঞানির্বাচন কমিশনের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। দেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে জারিকৃত এই আদেশে দলটিকে সভা, মিছিল, প্রকাশনা, মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ যেকোনো মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে যতদিন না বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া শেষ করছে। সরকার দাবি করেছে, গত বছর শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় দলটির নেতারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।সমর্থকদের উপর দমন-পীড়ন এবং অনলাইন তৎপরতা বন্ধসরকারের এক উপদেষ্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে বা অনলাইনে কেউ মত প্রকাশ করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো, বিশেষ করে জাতিসংঘ, এই ধরনের পদক্ষেপকে গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদকে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশঙ্কা হিসেবে উল্লেখ করেছে।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি তিন সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হতে পারেন। সংস্থাটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার আহ্বান জানায়, কারণ তাতে লক্ষ লক্ষ ভোটারের অধিকার হরণ হয়।নির্বাসনে শেখ হাসিনা, দল চরম সংকটেটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের আগস্টে ব্যাপক আন্দোলন ও সামরিক-সমর্থিত সরকারের পরিবর্তনের মুখে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান। তিনি এখনো নির্বাসনে রয়েছেন, সঙ্গে রয়েছেন একাধিক প্রাক্তন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উপর প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে।শেখ হাসিনার অপসারণের পর থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের বহু অফিসে হামলা চালানো হয়েছে বা আগুন লাগানো হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ও রয়েছে। দলটির দাবি অনুযায়ী, হাজার হাজার কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অনেকেই এখনো নিখোঁজ।আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ারবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার অভিযোগ এনেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই নিষেধাজ্ঞা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে গলা টিপে হত্যা করেছে, সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করেছে এবং ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়িয়েছে।”১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দলটি বর্তমানে তাদের ইতিহাসের অন্যতম বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে।ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাঅন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের বাইরে থাকায় এবং শীর্ষ নেতারা নির্বাসনে বা আটক অবস্থায় থাকায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন অজ্ঞাত ও অনিশ্চিত।