ঈদের পরই আসছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হওয়ার পর প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফল প্রকাশে বিলম্বের পেছনে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকা ও বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ সোমবার (২ জুন) গণমাধ্যমকে জানান, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল ঈদের পর প্রকাশিত হবে। গতকাল (রোববার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটিতে চলে গেছে, তাই প্রশাসনিক কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় ফলাফল তৈরি করতে বাড়তি সময় প্রয়োজন হচ্ছে।”দীর্ঘ আট বছর পর ভর্তি পরীক্ষাচলতি বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আট বছর পর আবার সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করেছে। গত শনিবার (৩১ মে) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারা দেশের ৬৪টি জেলার মোট ৮৭৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় প্রায় ৫ লাখ ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী।২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো শুধুমাত্র এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা শুরু হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে লিখিত বা মৌখিক কোনো ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রমভাবে এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) ভিত্তিক ১০০ নম্বরের একটি ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।মূল্যায়নের নতুন কাঠামোএবারের ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তবে ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা হবে না। মেধাতালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে শুধু ভর্তি পরীক্ষার ফল নয়, শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী শিক্ষাজীবনের ফলাফলও বিবেচনায় নেয়া হবে।ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ৪০ শতাংশ এবং এইচএসসি ফলাফলের ৬০ শতাংশ যোগ করে সর্বমোট ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। ফলে কেবল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই হবে না, বরং এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল করাটাও হবে চূড়ান্ত মেধা তালিকায় জায়গা পাওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত।দেশের সবচেয়ে বড় ভর্তি পরীক্ষাজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে দেশের ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে ২৬৪টি কলেজ সরকারি এবং ৬১৭টি বেসরকারি। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সম্মান কোর্সে মোট আসনের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫টি।পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পরীক্ষাকেন্দ্রের কারণে এটি দেশের সবচেয়ে বড় ভর্তি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিচালনা ও মূল্যায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফলাফল তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তবে ঈদুল আজহার ছুটি শেষে পুরোদমে কাজ শুরু হবে এবং এরপরই ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হবে।শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অপেক্ষাভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় এখন লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীদের অনেকে জানান, দীর্ঘদিন পর আবার ভর্তি পরীক্ষা হওয়ায় তারা কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, তবে পরীক্ষাটি মোটামুটি ভালো হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ঈদের পর যথাসময়ে ফল প্রকাশ করা গেলে ভর্তি প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হবে। এরপর শুরু হবে বিষয় ও কলেজ পছন্দক্রম অনুযায়ী মেধা তালিকা অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম।বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যেন প্রতিটি ধাপ নির্ভুলভাবে শেষ করা যায়। এত বিশাল সংখ্যক আবেদন ও উত্তরপত্র যাচাই করতে সময় লাগছে, তবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”উপসংহারজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে যেমন উৎকণ্ঠা রয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ফল প্রকাশের বিষয়ে সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। ঈদের ছুটি শেষে ফলাফল প্রকাশিত হলে শুরু হবে দেশের অন্যতম বৃহৎ উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের নতুন অধ্যায়।

Leave a Reply