
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট রূপরেখা চেয়ে আবারও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান বিএনপির
বিগত ২৪ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠিত বৈঠকের পরও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ বা সময়সূচি ঘোষণা না করায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির মতে, এমন অনিশ্চিত ও অস্পষ্ট অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহের সৃষ্টি করছে।মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে তিনি বলেন, দেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকার একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি ছিল অস্পষ্ট, যা প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের পথে অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।বিএনপির অবস্থান ও দাবিবিএনপি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তারা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায় না এবং অতীতেও চায়নি। তবে দলটি ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ও কাঠামো নির্ধারণের জোর দাবি জানিয়েছে।ড. মোশাররফ বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে সমান্তরালে চলতে পারে। একইসঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও অব্যাহত থাকতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদী শক্তি ও দোষী ব্যক্তিদের বিচারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি একসাথে এগিয়ে নেওয়া সময়ের দাবি।”

উপদেষ্টার বিবৃতি নিয়ে উদ্বেগসংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলে সরকারের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে মোশাররফ বলেন, “এই অভিযোগ অস্পষ্ট এবং দায় এড়ানোর প্রচেষ্টা। দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করাই একমাত্র পথ।”তিনি আরও যোগ করেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একইসাথে চালু থাকলে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে সরকারের প্রতি বিএনপির সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”ঢাকা দক্ষিণে মেয়রের শপথ নিয়ে প্রশ্নসংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, আদালতের রায় অনুযায়ী বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এখনও তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা হয়নি। বিএনপি নেতারা এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং শপথ গ্রহণে বিলম্ব না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ও বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বানখন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে দেশে একটি গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে এবং বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”তিনি আরও বলেন, “দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও শ্রেণি-পেশার সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন ছাড়া রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।”শেষ কথাবিএনপি মনে করে, ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য অবিলম্বে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। অন্যথায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে এবং জনআস্থা নষ্ট হবে।এই প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, রাষ্ট্র পরিচালনায় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সব রাজনৈতিক শক্তিকে যুক্ত করে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এতে শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনীতি, বিনিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা ও জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।