ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি: শান্তির ঘোষণায় পাকিস্তানজুড়ে উল্লাস, মিষ্টি বিতরণে মাতোয়ারা জনতা

ছবিটি পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের আনন্দ উল্লাসের সময় মিষ্টি বিতরণ করার, ছবিটির সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাতের পর অবশেষে শান্তির বার্তা এলো উপমহাদেশে। আজ শনিবার ভারত ও পাকিস্তান যৌথভাবে একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার পর এই ঘোষণা দুই দেশের জন্যই এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে এমন এক সময়ে, যখন সীমান্ত এলাকায় জনগণ উদ্বেগ আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল। আজকের ঘোষণায় যেন নতুন করে আশার আলো দেখছে সাধারণ মানুষ। শান্তির এই বার্তা পেয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। রাজধানী ইসলামাবাদ, লাহোর, করাচিসহ বহু শহরের মানুষ সড়কে নেমে উল্লাসে ফেটে পড়েছে। চলছে মিষ্টি বিতরণ, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে শহরগুলো।আনন্দের জোয়ারে গা ভাসালেন পাকিস্তানিরাআল জাজিরার এক সরাসরি প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের অনেক শহরে মানুষ খোলা রাস্তায় শান্তিচুক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। একাধিক শহরে র‍্যালি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, এবং লোকসংগীতের সুরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে জনগণকে।লাহোর শহরের এক যুবক মোহাম্মদ ফতেহ বলেন, “এটা আমাদের জন্য এক গর্বের দিন। আমাদের সেনাবাহিনী শক্তিশালী জবাব দিয়েছে এবং আজকের শান্তিচুক্তি আমাদের কূটনৈতিক জয়ের প্রতীক।” তিনি আরও বলেন, “ভারতের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।”ইসলামাবাদের ৪৫ বছর বয়সী গৃহবধূ জুবাইদা বিবি শান্তির ঘোষণায় আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, “যুদ্ধ শুধু দুঃখ আর ধ্বংস ডেকে আনে। আমি খুশি যে এখন শান্তি ফিরে এসেছে। আমার কাছে আজকের দিনটা যেন ঈদের মতো লাগছে।”কাশ্মীরেও শান্তির স্বস্তিপাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদের বাসিন্দারা যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে সংঘাতে জর্জরিত এই অঞ্চলের মানুষ আজ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।মুজাফ্ফরাবাদের এক বাসিন্দা জুলফিকার আলী বলেন, “আমাদের জন্য শান্তির মানে হলো বেঁচে থাকা। আমরা অনেক কষ্ট করেছি। আজকের সিদ্ধান্তটা বুদ্ধিমানের কাজ, যা দুই দেশের ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।”যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিএই যুদ্ধবিরতির পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এক ঘোষণায় জানান, “দীর্ঘ রাতব্যাপী আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই শান্তিপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য উভয় দেশকে আমি অভিনন্দন জানাই।”এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, “দিনভর চলা কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা একটি সম্মতিতে পৌঁছাতে পেরেছি। এটি গোটা অঞ্চলের জন্যই শান্তির প্রতীক।”ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। উভয় দেশই গুলিবর্ষণ ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধে সম্মত হয়েছে। এই পদক্ষেপ দুই দেশের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”জনগণের প্রত্যাশা: স্থায়ী শান্তিযদিও এই যুদ্ধবিরতি তাৎক্ষণিক সংঘর্ষ থামাতে সক্ষম হয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদী শান্তির পথ এখনো চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আস্থার ঘাটতি এবং কাশ্মীর ইস্যু—সব মিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে এখনো বহু জটিলতা রয়ে গেছে।তবে সাধারণ জনগণ এখনই চাইছেন স্থায়ী শান্তির পরিবেশ। পাকিস্তানের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, “যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। আলোচনা, কূটনীতি আর বোঝাপড়ার মাধ্যমেই আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।”উপসংহারভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক এই যুদ্ধবিরতি নিঃসন্দেহে গোটা উপমহাদেশের জন্যই একটি স্বস্তিদায়ক খবরে পরিণত হয়েছে। যদিও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ, তবু এই শান্তির ক্ষণিক উল্লাস দুই দেশের মানুষের মনে আশার বীজ বপন করেছে।শান্তির পথে এই অগ্রগতি যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়—এটাই এখন দুই দেশের সাধারণ মানুষের প্রার্থনা।

Leave a Reply