Nikhil Kamath: বলুন তো, বর্তমান জীবনে কোন জিনিসটি সবচেয়ে মূল্যবান? আপনি হয়ত বলবেন টাকা পয়সা। অথবা কেউ বলতে পারেন, সোনা-রূপা অথবা প্রচুর জমি জায়গা পেলেই হয়ত জীবন স্বার্থক। জেরোধার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাত কিন্তু অন্য কথা বললেন । আর তাঁর এই কথাই তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।

বলুন তো, বর্তমান জীবনে কোন জিনিসটি সবচেয়ে মূল্যবান? আপনি হয়ত বলবেন টাকা পয়সা। অথবা কেউ বলতে পারেন, সোনা-রূপা অথবা প্রচুর জমি জায়গা পেলেই হয়ত জীবন স্বার্থক। জেরোধার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাত কিন্তু অন্য কথা বললেন । আর তাঁর এই কথাই তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।

নিখিল কামাত সম্প্রতি এমন এক মন্তব্য করেছেন, যা থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে—আগামী দিনে সোনা, রুপো, নগদ টাকা, মূল্যবান গয়না কিংবা জমিজমার মতো সম্পদ আর তেমন মূল্যবান থাকবে না। তাঁর মতে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ‘ইলেকট্রন’ এবং ‘শক্তি’ই হয়ে উঠতে পারে নতুন যুগের মুদ্রা বা বিনিময় মাধ্যম।

কামাতের এই ভাবনাটি নিছক কল্পনাপ্রসূত নয়, বরং এটি ভরসা পাচ্ছে আধুনিক গবেষণার উপর ভিত্তি করে—যেখানে দেখা যাচ্ছে, দ্রুত বর্ধনশীল ডেটা সেন্টার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ খরচ অসাধারণ হারে বাড়ছে। এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে ‘শক্তি’ এবং ‘ইলেকট্রন’ ভবিষ্যতের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

ডেটা সেন্টার হল এমন একটি অবকাঠামো, যেখানে আপনার প্রতিটি অনলাইন কার্যকলাপ—চাই তা নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখা হোক বা ক্লাউডে ফাইল সংরক্ষণ—প্রক্রিয়াজাত ও পরিচালিত হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, একটি নতুন ডেটা সেন্টার প্রতি বছর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তা ৪ লক্ষ বৈদ্যুতিক গাড়ির সম্মিলিত বিদ্যুৎ খরচেরও চেয়ে বেশি!

এই কারণেই যেকোনও ডেটা সেন্টারের মোট খরচের ৬৫% শুধুমাত্র বিদ্যুতের (কম্পিউটিং এবং কুলিং) পিছনে ব্যয় করা হয়।বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ডেটা সেন্টার রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ৩,৬৮০টি। এর পরেই রয়েছে জার্মানি (৪২৪টি) এবং ব্রিটেনে (৪১৮টি) । ২৬২টি ডেটা সেন্টার নিয়ে ভারত এই তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে।

সার্ভারের পরিমাণ বাড়ার ফলে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তাও ক্রমশ বাড়ছে। গবেষকদের ধারণা, এই প্রবণতা বজায় থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট বিদ্যুতের প্রায় ১০% খরচ হবে শুধুমাত্র ডেটা সেন্টারগুলোতে।

AI শক্তির ক্ষুধা বাড়িয়ে দিচ্ছে:গবেষণা বলছে যে যদি বিশ্বের ইন্টারনেট সার্চের মাত্র ৫% AI এর সাহায্যে করা হয়, তাহলে এর জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুৎ এক বছরের জন্য ১০ লক্ষ ভারতীয় বাড়ি আলোকিত করার জন্য যথেষ্ট হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন নিশ্চই ঠিক কোন দিকে এগোচ্ছি আমরা?

উপরের এই পরিসংখ্যানই AI এর আসল খরচ বুঝিয়ে দেয় – যেমন OpenAI এর স্যাম অল্টম্যান এই প্রসঙ্গে বলেন “প্লিজ” এবং “থ্যাঙ্ক ইউ” এর মতো শব্দগুলির জন্যও লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ হয়।

‘এনার্জি কারেন্সি’ বা ‘শক্তি মুদ্রা’ বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন একটি ধারণা, যেখানে বিদ্যুৎকে একটি আর্থিক সম্পদের মতো বিবেচনা করা হয়। নিখিল কামাতের যুক্তি হলো—যদি বিদ্যুৎ প্রতিটি ডিজিটাল কার্যক্রমের মূলভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে একে কেন মুদ্রার মতো মর্যাদা দেওয়া হবে না? একবার চিন্তা করুন—যেমনটি এখন অনেক কোম্পানি ডলার বা ইউরোর দামের ওঠানামা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মুদ্রা হেজিং করে, ভবিষ্যতে তারা একইভাবে বিদ্যুতের দামের অস্থিরতা থেকেও রক্ষা পেতে ‘এনার্জি হেজিং’ করতে পারে।

সেক্ষেত্রে শক্তিও ‘সম্পদ’ হিসেবে লেনদেন করা যাবে। কল্পনা করুন, যদি সুপারমার্কেট বা ডেটা সেন্টারগুলি আজ বৈদেশিক মুদ্রা বা বিটকয়েনের মতো কিলোওয়াট-ঘণ্টা লেনদেন করে! ভবিষ্যতে, সম্ভবত ব্লকচেইন-ভিত্তিক ‘শক্তি টোকেন’ও আসতে পারে, যার মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রার মতো শক্তি বিনিময় করা হবে।

তাহলে কি অর্থনৈতিক ধ্যানধারণাগুলো একেবারে পাল্টে যাবে?যদি এমনটা বাস্তবে রূপ নেয়, তবে এটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে এক বিরাট মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা করবে। মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপের পদ্ধতি, ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের ধরন, এমনকি ‘মূল্য’ শব্দটির ধারণাও নতুন করে নির্ধারণ করতে হতে পারে। নিখিল কামাতের মতে, এমন ভবিষ্যতে সম্পদের পরিমাপ কেবল টাকার অঙ্কে নয়, বরং আপনি কতটা শক্তি বা বিদ্যুৎ ক্রেডিটের অধিকারী—তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হয়ে উঠতে পারে।